ঢাকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

সংসদ এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন নির্মাণ পরিকল্পনা স্থগিত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২১ দুপুর

ছবি: সংগ্রহীত

জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ থেকে আপাতত সরে এসেছে সরকার।

স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বিদ্যমান দুটি ভবন একীভূত করে সেখানে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও নানা জটিলতা ও সমালোচনার কারণে এখন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ধীরগতির কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। জানা যায়, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের ভবন দুটির মধ্যে দুই স্তরের করিডোর তৈরি করে সেটিকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব নজরুল ইসলাম, সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান এবং এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুব উস সামাদসহ একটি প্রতিনিধি দল ভবন দুটি পরিদর্শন করেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও একাধিকবার পুরো এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তবে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে এই প্রকল্প থেকে আপাতত সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারের এমন পরিকল্পনা জনসম্মুখে আসার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে— যদি স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাড়ি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে রূপান্তর করা হয়, তাহলে নতুন সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের জন্য বাসস্থান কোথায় হবে? তাছাড়া নতুন প্রধানমন্ত্রীর দফতর, কর্মকর্তা, নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কর্মীদের থাকার জায়গা কোথায় হবে— এমন নানা প্রশ্নও উঠেছে।

সংসদ ভবন এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণের ফলে স্থপতি লুই আই কানের মূল নকশা বিকৃত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অভিযোগ উঠেছে, লুই আই কানের নকশা অমান্য করেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বর্তমান বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে। একইভাবে ১০ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রও সেই নকশা ভেঙে তৈরি করা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রধানমন্ত্রী বাসভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এডিপিতেও এমন কোনো প্রকল্পের উল্লেখ নেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, এ বিষয়ে কোনো অর্থ বরাদ্দ এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। সূত্র বলছে, নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে তা ঠিক করবে পরবর্তী নির্বাচনে আসা নতুন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার শুধু বিদ্যমান নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ করবে। গণপূর্ত সচিব নজরুল ইসলাম ও সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলার সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পরিচালিত হচ্ছে, আমাদের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই।

” একই মন্তব্য করেন সংসদ সচিবালয়ের আরেক অতিরিক্ত সচিবও। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়েই বর্তমান গণভবন নির্মিত হয়, যদিও তিনি সেখানে বসবাস করেননি। পরবর্তীতে এরশাদের আমলে এটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে পুনরায় এটিকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ওইদিন গণভবনে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রবেশ করে ভাঙচুর চালালে ভবনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরে অন্তর্বর্তী সরকার এটি ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার উদ্যোগ নেয়। ফলে এখন প্রশ্ন উঠেছে— নতুন প্রধানমন্ত্রীর ঠিকানা হবে কোথায়?

Link copied!