জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী অবস্থান নেওয়ার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বড় ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পাশাপাশি একই অভিযোগে ৩৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার বা তাদের সনদ বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক শাহিনুজ্জামান।
সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্তের তালিকায় রয়েছেন ১৯ জন শিক্ষক এবং ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদের বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর নেতৃত্বে একটি “শাস্তি নির্ধারণ কমিটি” গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ মার্চ আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, যারা জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে রিপোর্ট জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরে কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। বরখাস্তের তালিকায় রয়েছেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক রবিউল হোসেনসহ আরও অনেকে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আছেন প্রশাসন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান, আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, সহকারী রেজিস্ট্রার ওয়ালিদ হাসান মুকুটসহ একাধিক কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, একই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে যারা পড়াশোনা শেষ করেছেন, তাদের সনদ বাতিল করা হবে, আর যারা অধ্যয়নরত, তারা বহিষ্কারের মুখে। শাস্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন অর্থনীতি, সমাজকল্যাণ, আইন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ইংরেজি, বাংলা, চারুকলা ও ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বরখাস্তের মুখে থাকা ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন বলেছেন, “এটাই এখন দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিষ্ঠুর নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও বেআইনি।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হবে, তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অভিযোগ তুলেছেন যে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।

আপনার মতামত লিখুন :