ঢাকা শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
বসছে সেন্সরযুক্ত রোবটিক ক্যামেরা

হাতি রক্ষায় রেলওয়ের ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প

মো: জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ০২:১৭ রাত

ছবিঃ মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হাতি চলাচলের করিডোরগুলোতে সেন্সরযুক্ত রোবটিক ক্যামেরা বসাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। হাতি সুরক্ষার এ বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। ক্যামেরাগুলো হাতির অবয়ব শনাক্ত করতে সক্ষম এবং শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংকেত পাঠাবে। সংকেত পেলে রেললাইনের পাশের লাল বাতি জ্বলে উঠবে, যা দেখে ট্রেনচালক দূর থেকেই বুঝতে পারবেন রেললাইনে হাতি আছে। এতে হাতির প্রাণহানি যেমন কমবে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমে আসবে।

প্রকল্পের আওতায় হাতি চলাচলের ছয়টি করিডোরে ছয়টি রোবটিক ক্যামেরা বসানো হবে। এছাড়া সংকেত দেওয়ার লালবাতি, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যেই এই কাজ শেষ করা হবে। ট্রেনচালক ও গার্ডদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, এরই মধ্যে একটি ধাপের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনটি ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এর মধ্যে প্রায় ২৭ কিলোমিটার সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে গেছে। বিশেষ করে চুনতি, ফাঁসিয়াখালী ও মেধাকচ্ছপিয়া বনাঞ্চলে রয়েছে হাতির অবাধ চলাচলের করিডোর। এজন্য আগেই কয়েকটি আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হলেও দুর্ঘটনা পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি। গত বছরের অক্টোবর মাসে লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্যে রেললাইন পার হতে গিয়ে একটি হস্তিশাবক মারা যায়। এ ছাড়া চলতি বছরের জুলাইয়ে হাতির পাল রেললাইনে উঠে পড়লে ট্রেন থামিয়ে দেয়া হয়, তবে একটি হাতি ট্রেনকে ধাক্কা দিয়ে আহত হয়।

কেবল হাতিই নয়, এই রেললাইনে প্রায় সময়ই মানুষ মারা যাচ্ছে। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেললাইন চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু এ বছরের আগস্টের মধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন। অবাক করার মতো বিষয় হলো, ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৫৬টিতেই গেটম্যান নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাতি রক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার প্রশংসনীয় হলেও মানুষের নিরাপত্তায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ রেলওয়ে নেয়নি। দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোতে কেবল কিছু সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় সারছে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, “আমরা ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ করেছি, ট্রেনের গতি কমানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও হাতি কখনো ওভারপাস ব্যবহার না করে রেললাইনে উঠে পড়ে। তাই এবার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে হাতি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বছরের মধ্যেই সেন্সরযুক্ত ক্যামেরাগুলো স্থাপন করা হবে।”

Link copied!