ঢাকা শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
উপকূলীয় কৃষিতে ধস

লবণাক্ততায় হুমকির মুখে ৩৫ হাজার হেক্টর জমি

নাইমুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:১৫ রাত

ছবিঃ মো: ইমাম হোসেন

 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি 

সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কলারোয়া উপজেলায় সম্প্রতি লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমি সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৬ মাসে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বাধ ভেঙে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় অনেক জমিতেই ধান ও সবজির চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, “আমার ৩ বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা দিয়েছিলাম। এখন পানির নিচে লবণের স্তর পড়ে গিয়েছে। গাছগুলো মরতেছে, আর কিছুই করার নাই।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই অঞ্চলে গত এক দশকে লবণাক্ততা বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। শ্যামনগরের মতো এলাকায় যেখানে আগে বছরে দুইবার ফসল হতো, এখন একবারও নিশ্চিত নয়।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বর্ষার সময়কালে নদীগুলোর পানির চাপ কমে যাওয়ায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ভেতরে প্রবেশ করছে। এতে মাটির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

জলবায়ুবিষয়ক গবেষক ড. শওকত আলী বলেন: “এই ধরণের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে এখনই টেকসই কৃষি ও বিকল্প পেশার ব্যবস্থা না করা হলে কয়েক লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।”

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লবণাক্ততা সহনশীল ধান ও লবণ প্রতিরোধী সবজির জাত চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নদীশাসন ও বাধ সংস্কারের কাজ শিগগির শুরু হবে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, প্রকল্পের ঘোষণা থাকলেও কাজের গতি খুবই ধীর। তারা দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার উপকূলীয় কৃষকরা। লবণাক্ততা যদি এই হারে বাড়তেই থাকে, তাহলে আগামী ৫ বছরে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Link copied!