ঢাকা শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে বিপন্ন দেশীয় মাছ ও জলজ প্রাণি

আবদুল মমিন

প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:১৬ বিকাল

ছবিঃ শাফিন আহমেদ


বগুড়ার নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল। এর ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণি। মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা মাছ এই জালে আটকা পড়ায় প্রজাতি সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের জলাশয়ে ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছ রয়েছে, যার মধ্যে ছোট মাছের সংখ্যা ১৪৩ প্রজাতি। এসবের মধ্যে ১২টি প্রজাতি চরম বিপন্ন, ২৮টি বিপন্ন এবং ১৪টি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য মাছের মধ্যে আছে মলা, ঢেলা, চেলা, পুঁটি, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, কাজলি, বাতাশি, টেংরা, বাচা, টাকি, বাইম, খলিশা, কৈ, বেলে ও চিংড়ি।

চায়না দুয়ারি জালের হুমকি

লোহার রিং ও মিহি সুতো দিয়ে তৈরি এই জালে শুধু মাছ নয়, শামুক-ঝিনুক, ব্যাঙ, কাঁকড়া, সাপ, কুচিয়াসহ নানা জলজ প্রাণি আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়ছে। স্থানীয়রা জানান, পানির নিচে লুকিয়ে থাকা ৫০-৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাল অগভীর পানিতে খুঁটির মাধ্যমে বসানো হয়, যা চিহ্নিত করা কঠিন।

প্রভাবিত এলাকা

সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও শিবগঞ্জ উপজেলার বাঙালি, করতোয়া, গাংনাই ও নাগর নদীতে বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই জালের ব্যবহার বেড়েছে। শিবগঞ্জের মোকামতলা, ময়দানহাট্টা, বাকসন, সিংগারপাড়া, পাতাইর, শ্যামপুর, সাদুল্যাপুর, আলাদীপুর, হুদাবালা ও মেদেনিপাড়া এলাকায় দিনে-রাতে অবাধে মাছ ধরা হচ্ছে এই জালে।

স্থানীয়দের উদ্বেগ

শিবগঞ্জের বাসিন্দা কনক দেব জানান, অবৈধ জালের কারণে নদী ও খাল-বিলের প্রাণবৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলাম রবি বলেন, “এই জালের ব্যবহার বন্ধ না করলে এক সময় মাছের পরিবর্তে বিকল্প খাদ্যের কথা ভাবতে হবে আমাদের।”

প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারি ও আইন প্রয়োগের অভাবে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না। এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

Link copied!