পরিত্যক্ত ধানক্ষেতে ঢেঁড়শ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার চাষিরা। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ধান কাটার পর অব্যবহৃত জমিতে ঢেঁড়শ আবাদ করে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বিষু রঞ্জন কপালি নামের এক কৃষক।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের টিকরিয়া কপালিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে সবুজ ঢেঁড়শ গাছে ঝুলে আছে অগণিত সবজি। কৃষক বিষু রঞ্জন কপালি জানান, তিনি দুই কিয়ার জমিতে অগ্রহায়ণ মাসে ঢেঁড়শের চারা রোপণ করেন। প্রায় দেড়-দুই মাসের ব্যবধানে সেই ঢেঁড়শ গাছে এখন নিয়মিত ফলন আসছে। একদিন পরপর দেড় থেকে দুইশ কেজি ঢেঁড়শ উত্তোলন করা যাচ্ছে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কিয়ারে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। ঢেঁড়শের বাজারদর সম্পর্কে তিনি বলেন, “শুরুর দিকে কেজি প্রতি ৯০ টাকায় বিক্রি করলেও বর্তমানে পাইকারি বাজারে কেজি ২৫ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
এই ঢেঁড়শ জাতটির নাম ‘দুরন্ত’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন সম্প্রসারণযোগ্য নতুন জাতের আওতায় এটি চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। বিষু রঞ্জন আরও জানান, এই ফসল কাটার পর শ্রাবণ মাসের শেষে জমিটি ধান চাষের জন্য প্রস্তুত করবেন। ধান কাটার পরে আবারও কোনো সবজি চাষ করবেন বলেও জানান তিনি।
তবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে রয়েছে কৃষকদের ক্ষোভ। অপর এক কৃষক অমর কপালি বলেন, “আমরা ঢেঁড়শ পাইকারি বাজারে ২৫ টাকায় বিক্রি করি, কিন্তু সেই ঢেঁড়শই শহরের বাজারে বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকায়। এই সিন্ডিকেট ব্যবস্থা আমাদের প্রাপ্য লাভ থেকে বঞ্চিত করছে।”
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমরজিৎ সিং জানান, “আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। ঢেঁড়শ ছাড়াও বিভিন্ন মৌসুমি ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন বলেন, “আমাদের উপজেলার কপালিপাড়া গ্রামটি কৃষির জন্য একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। বর্তমানে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ঢেঁড়শের আবাদ হচ্ছে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন।” ধানচাষের ফাঁকা সময়ে একই জমিতে ঢেঁড়শ আবাদ করে কৃষকরা যেমন বাড়তি আয় করছেন, তেমনি জমিরও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এই মডেল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও হতে পারে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

আপনার মতামত লিখুন :